খুব ভোরে অফিসের কালো ব্যগটি,
তাড়াহুড়ো করে নিজেকে সাজায়!
এই এতো বছরেও একইরকম সাঁজ রয়ে গেছে তার!
যেনো নির্বান চুলের সিঁথি পড়ে নিয়েই
ডেকে উঠতে পারে সুহাসিনী…. বলে,
যদিওবা থাকে ক্রসিংয়ের রেলে!
সুহাসিনী বলে কতোকাল কেউ ডাকে না,
প্রতি ভোরে তবুও সে শুনতে পায়!
অজস্র কাক ও ভেঁকের ডাকের মাঝখানে সন্ধ্যার আবছায়া সুহাসিনী বলে ডেকে ওঠে,
ডেকে ওঠে মাঝরাতে বন থেকে পালিয়ে আসা
সবুজ ঘাসফড়িং,
ডাক শোনা যায় শেষরাতের আর কার গলায়!
তারপর, ঘুম আসেনা,
ফড়িং রাতের শরীরে লেপ্টে থাকে,
গা ঘসে উঠে বসে,
ভেবে ফেলে -নাহ!
“আর কতো,কতো আর?
এমন অন্ধকার মুড়ে বসে থাকা?
অকারণ কার আশায় প্রতি ট্রেনে দৃষ্টির ব্যস্ততা?
অনর্থক অভিনয়ে জীবন সরল ও নিষ্প্রাণ রাখা?
জটিলতা চাই,
দরকার অনেক অনেক ওঠানামা,
ভেতর বাহিরে অনেক ওলটপালট করে দেয়ার মতো ঘটনা!
দরকার শরীর ছিড়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চাওয়া জালটাকে একবার অন্তত গায়ে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা!
চেষ্টা তবুও সুহাসিনী করেনা,
কোথায় যেনো তার আটকে থাকে সব জল,
গড়িয়ে পড়ার আগেই সে চোরাস্রোত সমস্ত জল শুষে নেয়!
মধ্যাহ্নের গণগণে সূর্যের একদিনে নির্বান, আত্মহ্ত্যা করতে গিয়েছিলো!
সেসব স্মৃতি?
নাকি অন্য?
তাকে চায় নাকি
আর কারো জন্য?
বলতে পারেনা?
নাকি বলা হয়ে ওঠেনা?
অথবা এমন নয়তো কখনো বলতেই চায়না?
তবে কেনো অকারণ
গুহার ভেতরের অজানা প্রাচীনের
এক করুণ সুরের কান্না শোনা যায়,
কাছাকাছি একটু দাড়ালেই?
আমাদের জন্ম ও বেঁচে থাকার ভিড়ে
কোন অলভ্য বস্তু এমন সুর হয়ে যায়?
কোন অচেনা নদী মাঝে মাঝে দুএকটা নাম বলে যায়,
শেষ করেনা একটাও গল্প?
কোন স্পৃহা মৃত শরীরেও একবিকেল প্রাণ ঢেলে দেয়?
সুহাসিনী বাঁচিয়ে রাখতে চায় রাত পর্যন্ত নিজকে,
কিন্তু রাত ফুরিয়ে যায় তার অনেক অনেক আগে!
বেলা প্রায় শেষ শেষ!
হেমন্তের মতো ত্বকের অবসর যাপন,
অস্তাবল ভরে যাচ্ছে পরিশ্রমী ঘোড়ায়!
কিছুক্ষণ ওদের বিশ্রাম,
তারপর রাতে আবার পেরেক ঠোঁকার যন্ত্রণা!
চারপাশে রঙ্গিন আলো জ্বলে উঠছে,
হঠাৎ আলোর ঝলক চোখে পড়ায় একটি ঘোড়া উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে পালাতে চেয়েছে,
অথচ ওর আলোই দরকার!
তেঁতে যাওয়া হলদে বারান্দায়,
দুহাতের ভাঁজে চিবুক রেখে সুহাসিনী নিজেকে চেনে,
পেছনের ভাঙ্গা চেয়ার পায়ের অলক্ষ্য আঘাতে পড়ে একটি হাতল ভেঙ্গে ফেলে চিৎকার করতে থাকে অস্ফুটে,
চিবুক একলা হয়ে ওঠে,
অস্থির পায়চারি করে,
দৌড়ে ভেতরের ঘরে যায়,
মা, সীমের তরকারি রাঁধেন,
গন্ধ নাকে লাগে,
যেতে যেতে ঘরের দরজায় ধাক্কা লাগে তার,
বিড়ালটা পায়ের নীচে পড়ে অদ্ভূভাবে গোঙ্গাতে থাকে,
সুহাসিনীর মায়া হয়,
তবুও রেখে যায়,
ছোঁয় না,
তারপর?
মায়ের দৃষ্টি সুহাসিনীর দৃষ্টির পাশে বসলেই,
সে চোর হয়ে ওঠে,
তারপর?
তারপর,
সীমের ঝোল চেখে আবার সঙ্গী হয়
অন্যদিকের কোনো খোলা জানালার!
জানালা কাঁপে মৃদু বাতাসে,
নানারকম শব্দ ওঠে তাতে,
সুহাসিনী কান পেতে রাখে,
যদি কেউ আসে তবে বোলো,
এ ঘরে বাস করেনা কেউ!
অন্ধআত্মার সম্মানবোঁধের বেড়িতে
আটকে আছে এঘরের সমস্ত দুয়ার,
কে আসে বন্ধ ঘরে ভিক্ষা চাইতে বারবার?